শুক্রবার ছুটির দিন জাতীয় স্টেডিয়ামে নিরিবিলি পরিবেশ। বিকেলে জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যমের ভিড়। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি প্রবাসী ফুটবলাররা ট্রায়াল দিতে এসেছেন। আগামীকাল আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল শুরুর আগে ফুটবলার ও তাদের পরিবারকে বাফুফে ওরিয়েন্টশন করিয়েছে আজ।
২৮-৩০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে ৫২ জন ফুটবলারের ট্রায়ালে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছিল বাফুফে। আজ বিকেলে ওরিয়েন্টশন ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের সময় ৪৩ জন উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ জন কাতারের দোহা থেকে ঢাকার পথে আসছেন। ফলে ট্রায়ালে মোট সংখ্যা দাড়াচ্ছেন ৪৮ জন।
ডেনমার্ক প্রবাসী সাকিব মাহমুদ এই ট্রায়াল প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। ৫২ থেকে সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ‘অতি সম্প্রতি দুই জন ফুটবলার ইনজুরিতে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট সংকটের জন্য একজনের রিশিডিউল হয়েছে। পাঁচ জন সেখানে আটকে ছিল ফ্লাইট বন্ধ থাকায়। তারা এখন দোহা থেকে ঢাকার পথে রয়েছে।’
আজ ওরিয়েন্টশনে থাকা ৪৩ জনের মধ্যে ৪১ জন সাকিব মাহমুদের মাধ্যমে এসেছেন। পথে থাকা পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনও তার মাধ্যমে আসছেন। বাকিরা নিজ উদ্যোগে ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসেছেন। শুরু থেকেই সাকিব মাহমুদের সঙ্গে বাফুফের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখছিলেন বাফুফের সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই ট্রায়ালের আপডেট দিয়ে যাচ্ছিলেন ফাহাদ। অথচ ট্রায়াল নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের দিন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। আজ আবার ওরিয়েন্টশনের দিন এসে যথারীতি গণমাধ্যমের সামনে হাজিরও হয়েছেন।
৩০ জুন ট্রায়াল শেষে নির্বাচিত বা সম্ভাব্য যোগ্যদের তালিকা কখন প্রকাশ হবে এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে কৌতুহল রয়েছে। আজ জাতীয় স্টেডিয়ামে বাফুফে সহ-সভাপতি ফাহাদ করিমকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অপেক্ষার কথাই শোনালেন, ‘আমাদের ট্যাকনিক্যাল বিভাগের কাছে ট্রায়ালে অংশ নেয়া ফুটবলারদের তথ্য, ভিডিও থাকবে। আমাদের কোচদের যখন প্রয়োজন হবে তখন সেই তথ্যের ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের ডাকবে।’
ফাহাদ করিমের এই উত্তর ধোয়াশা লেগেছে ইংল্যান্ড থেকে আসা এক ফুটবলারের অভিভাবকের। তিনি জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘আমারও একই প্রশ্ন। ইংল্যান্ড ফেরার সময় জানা উচিত আমার সন্তান বাফুফের বিবেচনায় আছে কি না। ফলাফল কখন পাব সেটি স্পষ্ট নয়।’ ইংল্যান্ড থেকে এই অভিভাবকের মতো ট্রায়ালে আসা অনেক ফুটবলার, অভিভাবকের সঙ্গে খোদ সমন্বয়ক সাকিব মাহমুদও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট নন, ‘আসলে এটি কঠিন ও যৌক্তিক প্রশ্ন। বাফুফে কখন এবং কিভাবে এটি প্রকাশ করবে সেটা এখনো জানায়নি।’
ক্লাব, জাতীয় পর্যায়ে যে কোনো ট্রায়ালের পরই ফুটবলাররা সাধারণত জানতে পারেন তিনি প্রাথমিক বিবেচনায় আছেন কি না। ট্রায়ালের পরপরই অনেকে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ইতালির মতো দূর দেশে ফিরে যাবেন। ফেরার আগে তারা ফলাফল না জানতে পারলে একটা সংকোচ নিয়েই রওনা হবেন পাশাপাশি সামনের পরিকল্পনা করতেও সংকটে পড়বেন।
চলমান এই ট্রায়াল মূলত আসন্ন এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ ও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে মেধাবী ফুটবলারের সন্ধানে। ঐ দুই দলের কোচ এখনও ঠিক হয়নি। দুই দলের কোচ চূড়ান্ত হলে সেই কোচ এই ট্রায়ালে থাকলে তিনি পরিকল্পনা সাজাতে ও প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় সংগ্রহ করতে পারতেন। দুই দলের কোচ ঠিক না করেই এই ট্রায়াল করে কতটুকু উপযোগীতা আসবে সেই প্রশ্ন নতুন করে উঠেছে।
আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন দিনের ট্রায়ালে সাবেক জাতীয় ফুটবলার, বিশিষ্ট কোচরা থাকবেন। যে কোনো ট্রায়ালের আগে বিচারকদের মধ্যে একটি পরিকল্পনা সভা কিংবা আলোচনা হয়। কে কোন দিক দেখবেন কিংবা কোনো প্রক্রিয়ায় কতটুকু বিচার করা হবে এখনো সেই সভা বা এসব নিয়ে বিচারকদের মধ্যে কোনো সভা হয়নি বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/এএজে